Monday, August 3, 2020

ল“ছাগু" গ“ছাগু" ও "সরল" অংক

বিদ্যালয় জীবনে প্রথম যখন লসাগু-গসাগু বুঝিবার চেষ্টা করিলাম, সেই সময় মনের ওপর কেমন যেন একটি বিষাদ আসিয়া ভর করিয়াছিল। আর সরল অংক তো সবসময়ই বাঁকা, ব্যাটার উত্তর একেকবার একেক রকম হইবেই। তখন হইতে "সরল" শব্দটির প্রকৃত অর্থই আমার নিকট উল্টাইয়া গিয়াছে এবং শব্দটি কোথায়ও দেখিলেই মনের মাঝারে এক ধরনের আকুলিবিকুলি অনুভূতির উদ্ভব হয়; মনে হয়, কোথাও না কোথায়ও প্যাঁচ আছেই। আমার মতই বাংলার মানুষের মনও এই সরল অংকের ধাক্কায় মনে হইতেছে বাঁকা হইয়া গিয়াছে এবং কতটা যে বাঁকিয়া গিয়াছে তাহা একটি খবর না পড়িলে কিছুতেই বুঝিতে পারা যাইবেনা। বেশী কথা না বাড়াইয়া খবরটির স্ক্রিনশট সংযুক্ত করিয়া দিলাম।

 

সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য "সরল বিশ্বাস" নামে একটি প্রায় অনুচ্চারিত ইন্ডিমনিটি ধারা বিভিন যায়গায় স্বীকৃত। ঊপরে উল্লেখিত খবরটিতে "জেকেজি" এবং "রিজেন্ট" যজ্ঞে সেই ধারাটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের তিনজন কর্মকর্তা প্রয়োগ করিয়া, আমার মত সরল অংকের চাপে পরিয়া বাঁকাইয়া যাওয়া মনের অধিকারীদের বুঝাইয়া দিলেন, তাহাদের কোন দোষ নাই, অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা "সরল বিশ্বাস" লইয়া তাহাদের অনুমতি দিয়া এখন বেকায়দায় পরিয়াছেন, প্রতারিত হইয়াছেন। আবশ্য যেই দুইটি কথা তাহারা তাহাদের বক্তব্যে উহ্য রাখিয়াছেন বলিয়া প্রতীয়মাণ হইতেছে, তাহা আর কিছুই নহে, 


১) রিজেন্টের মালিক যে বহু পুরানো পাপী, একজন চিহ্নিত প্রতারক তাহা দেখিবার দায়িত্ব তো আর তাহাদের নহে। 

২) তাহাদের "সরল বিশ্বাস"কে বাঁকা মনের বাংলার মানুষ তির্যক দৃষ্টিতে দেখিতেছে বলিয়া (হয়তো) তাহাদের মনে হইয়াছে, যেই কারণে আইনের প্রায় অনুচ্চারিত একটি ধারার প্রকাশ্য অবতারনা করিতে হইলো।

 

খবরটির সহিত সংযুক্ত ছবিটি দেখিয়া, যাহারা ছবি লইয়া গবেষণা করিয়া থাকেন তাহাদের বহুল ব্যবহৃত একটি বচন মনে পরিয়া গেল। তাহারা বলিয়া থাকেন, কথার চাহিতেও ছবি নাকি অনেক বেশী শক্তিশালী। আমি আবার অতশত বুঝি না। "সরল বিশ্বাস" নাকি অন্য কিছু ছিল এইখানে, তাহা হয়তো আর খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না, মাঝখানে কোরবানি হইলো দেশের মানুষ, ভুলন্ঠিত হইল দেশের ভাবমূর্তি, সরকারি টাকার অপচয় তো আছেই, শেষ পর্যন্ত দায় আসিয়া পরিবে হয়তো রাজনীতির ঘাড়ে; বাকি সবই "সরল বিশ্বাস"। 

 

শেক্সপিয়ারের এক অমর বাণীর কথা মনে পরিয়া গেল,

"Hell is empty. All the devils are here". 


তাঁহার মত বিশাল মানুষের মুখনিঃসৃত এই বাণীর মর্মার্থ আগেও বুঝিতাম না, এখনও বুঝিতে পারি না এবং ইহাও বুঝিয়াছে যে, এই সময়ে ইহা লইয়া চিন্তা করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণও নাই। তবে শেক্সপিয়ার যদি বর্তমানের আলোচ্য ঘটনায় এই বাণী ঝাড়িতেন তাহা হইলে তিনি নরকের কীট বলিতে আমার মত সরল অংকের চাপে পরিয়া বাঁকাইয়া যাওয়া মনের অধিকারীদের বুঝাইতেন, নাকি তথাকথিত সরল বিশ্বাসীদের বুঝাইতেন তাহা লইয়া আমি কিছুটা চিন্তিত বইকি। 

 

এই প্রজন্মের সন্তানেরা তো আবার ডুগডুগি চিনিবে না। তাহা না হইলে বর্তমান প্রজন্মকে এক্ষণে ডুগডুগি বানাইবার জন্য উৎসাহ দিতাম। ডুগডুগির ক্রেতা খুঁজিয়া না পাইলেও অন্তত নিজেরা বাজাইয়া মনের ঝাল মিটাইতে তো পারিতাম।

 

বিঃদ্রঃ- ডুগডুগি কি তাহা বুঝাইয়া বলাটা বিশেষ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে হইলো। ইহা কাঠের খোলের উপর ছাগলের চামড়া দিয়া মোড়াইয়া নির্মিত এক ধরনের ছোট্ট বাদ্যযন্ত্র। 

 

তবে আলোচ্য বিষয়ের মাঝে ছাগল শব্দটি না থাকিবার কারণে আমার শব্দচয়ন আমারই বুঝিতে অসুবিধা হইতেছে। এইখানে ছাগল বলিতে কাহাকে বুঝানো যাইতে পারে? সরল বিশ্বাসের মানুষেরা? বহু ভাবিয়া অবশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম যে, ছাগল যাহাকেই বুঝাইয়া থাকি না কেন, বাংলার মানুষকে যদি কেহ ছাগল ভাবিয়া থাকে তাহা হইলে তাহাদেরকে আরেকবার বিদ্যালয়ে পাঠাইয়া লছাগু ও গছাগু অধ্যয়নে মননিবেশ করিবার সুযোগ করিয়া দেওয়া আমাদের বিশেষ কর্তব্য।


No comments:

Post a Comment

হাবা গোবা

বাবা্র মৃত্যু শয্যায় প্রায় সপ্তাহ দশেক হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে আমি সার্বক্ষণিক ভাবে বাবার পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। সেই সময় বাবাকে দেখতে আসল...