স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে দেশে হৈচৈ চলছে, সকলের মত আমিও গা ভাসিয়ে দিয়েছিলাম ঐ গড্ডালিকাপ্রবাহে। কিন্ত আমার নিজস্ব একান্ত ব্যক্তিগত এক সমস্যার কারণে অন্যান্য খাতেও যা চলছে সেটার কিছু অংশ দৃষ্টিসীমায় চলে আসলো। ব্যক্তিগত সমস্যা সবার সাথে একটু ভাগ করে নিজের মনের বোঝা কিছুটা লাঘবের চেষ্টায় ভাবলাম দু'য়েকটা কথা বলেই ফেলি।
আগেই একবার বলেছি, শিক্ষা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়ীত্বের মাঝে পরে। আমাদের মত গরীব দেশ শুধু নয়, বিশ্বের প্রায় সকল গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে শিক্ষাকে সার্বজনীন করে তোলা সম্ভব হ'য়ে ওঠেনা বলেই এই খাতে শক্তিশালী প্রাইভেট সেক্টর গড়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের মত বিশ্বের আর কোন দেশে অন্তত স্কুল লেভেলে প্রাইভেট শিক্ষা কার্যক্রমকে এভাবে বানিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার দেশে এসে, বিশেষ করে, বেশীর ভাগ প্রাইভেট স্কুল গুলোর যথেচ্ছাচার এবং অতি-বানিজ্যিকীকরণের যেন কোন জবাবদিহিতা নেই। কোন নাম উল্লেখ না ক'রে আমি শুধু একটি প্রাইভেট স্কুলের উদাহরণ টেনে আনছি এখানে, অন্যান্যদের কি অবস্থা আমার জানা নেই। আমি যা বলছি তার অনেক কিছুই মিডিয়াতে প্রমান সহ এসেছে, তারপরও মনে হয় না তাদের কোন বোধদয় হয়েছে কিংবা দেশে এদের যথেচ্ছাচারের ওপর খবরদারী করার মত কেউ আছে। সত্যিই যদি কেউ না থেকে থাকে তবে সেটাও সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা উচিৎ, তাহলে অন্তত আমি ব্যক্তিগত অসহায়ত্ববোধ থেকে মুক্তি পাবো।
দেশে মহামারী চলছে, বিগত প্রায় পাঁচ মাস কোন স্কুলে কোন ক্লাস চলছে না। এর মাঝে উক্ত স্কুলটি তাদের স্টাফ ছাটাই করেছে। এই প্রায় পাঁচ মাস সময়ে লোক দেখানো ফ্রি জুম এপ্লিকেশন ব্যবহার করে নামে মাত্র অনলাইন ক্লাস করিয়েছে সর্বোচ্চ দিন দশেক। কিন্ত তারা রি-এডমিশন ফি'য়ের নামে বিগত বছরের চাইতে এবছরে প্রায় দ্বিগুন ফি দাবী করেছে। প্রতি বছর তারা ১০% হারে টিউওশন ফি বাড়িয়ে থাকে, যদিও বর্তমানে তাদের টিউশন ফি দেশের বহু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির চেয়ে বেশী। দেশের বর্তমান দুর্যোগকালীন সময়েও সেটার কোন ব্যতিক্রম চোখে পরছে না। অথচ, যতটুকু মনে পরে, বিগত ২০১৮-১৯ সালে তাদের নিজেদের অডিট রিপোর্টে নীট মুনাফা ৩২কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
তাদের লাভের অংক দেখে আমি পরশ্রীকাতরতায় ভুগছি বিষয়টি এতো সরলীকরণ করলে দু:খ পাবো। তারা শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণ করে বিশাল মুনাফা করছে এবং আমরা নিরুপায় ভাবে তাদের সহযোগীতা করছি, কিন্ত এই স্কুলের মালিক স্বপরিবারে বিদেশের মাটিতে বসবাস করেন এবং বছরের নয় মাস বিদেশেই থাকেন। তিনি সেখানে বসে মানি লন্ডারিং করছেন কিনা সেটাও আমার দেখবার বিষয় না কিন্ত রাষ্ট্রের কারও না কারও তো বিষয় গুলোর লাগাম টেনে ধরবার অথবা অন্তত তদারকি করবার কথা। সেই দায়ীত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনটা সেটাও আমি বুঝতে পারছি না বিধায় আমাকে অসহায়ত্ববোধ ঘিরে ধরছে।
এই বিষয়ে আমার বেশী কিছু বলাটা অভদ্রতার পর্যায়ে পরতে পারে ধরে নিয়ে যাদের জানার আগ্রহ আছে তারা কষ্ট করে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটি স্ক্রীনশট সংযুক্ত করলা পড়ে নেবেন। দূর্নীতির যে সার্বজনীন অবস্থা দেখছি সেটাতে মনে হয় না খুব সহসাই এটাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যাবে, কিন্ত একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে যদি আমরা এগিয়ে না যাই তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো দেশের ছাল-বাকলও খুঁজে পাবে না, দূর্নীতিবাজে সব উপড়ে নিয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment